বিমান বাহিনীর নন টেকনিক্যাল এর কাজ
আজকে আমাদের প্রতিবেদন হচ্ছে বিমান বাহিনীর নন টেকনিক্যাল এর কাজ সম্পর্কিত সকল বিস্তারিত তথ্যসমূহ নিয়ে। আজকে আমরা আলোচনা করব বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর বিমান সেনা নন টেকনিক্যাল ট্রেডে যারা রয়েছেন তাদের কাজ কি ।
তারা কেমন বেতন-ভাতা পেয়ে থাকেন, যে সকল সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন এবং তাদের পরীক্ষা পদ্ধতিতে নেওয়া হয় এই সকল কিছুর বিস্তারিত তথ্যসমূহ নিয়ে। আশা করি শেষ পর্যন্ত থাকবেন। শেষ পর্যন্ত পড়ুন, প্রতিবেদনটি অবশ্যই আপনার উপকারে আসবে।
আলোচনার বিষয় সমুহঃ
- বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর বিমানসেনা নন টেকনিক্যাল ট্রেডের কাজ কি
- আবেদনের যোগ্যতা
- বেতন ভাতা সুযোগ সুবিধা
- পরীক্ষা পদ্ধতি
(১) বিমানসেনা নন টেকনিক্যাল ট্রেডের কাজঃ
- অফিসিয়াল কাজ
- এয়ারক্র
- ফটোগ্রাফি,ক্যাটারিঙং ইত্যাদি কাজগুলো করে থাকেন এই ট্রেডের বিমানসেনারা]
(২) আবেদনের যোগ্যতাঃ
- এসএসসিতে যে কোনো গ্রুপ থেকে 3.5 থাকতে হবে৷
- বয়স ১৬-২১বছরের ভেতরে হতে হবে সাকুলার এ দেওয়া তারিখ অনুযায়ী
- জাতীয়তা বাংলাদেশী হতে হবে
- অবশ্যই অবিবাহিত হতে হবে
- উচ্চতা ৫ফুট ৪ইঞ্চি,বুকের মাপ:-৩০-৩২ইঞ্চি হতে হবে।
- ওজন উচ্চতার সাথে মিল থাকতে হবে মানে BMI ঠিক থাকতে হবে৷
- চোখ ৬\৬ থাকতে হবে। কালার ব্লাইন্ড গ্রহণযোগ্য নয়।
(৩) বিশেষ সুযোগ সুবিধাঃ
বেতন ও ভাতাঃ প্রশিক্ষণকালীন মাসিক বেতন টাকা ৯,০০০/-। প্রশিক্ষণ শেষে পদবী অনুসারে আকর্ষণীয় বেতন ও ভাতাদি পেয়ে থাকবে।
বিদেশ গমনঃ পেশাগত প্রশিক্ষণের জন্য বিদেশ গমনের সুযোগ রয়েছে।
উচ্চ শিক্ষাঃ বিমান বাহিনীর তত্ত্বাবধানে উচ্চতর শিক্ষা অর্জনের সুযোগ রয়েছে।
জাতিসংঘ মিশনঃ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে গমনের সুযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশ দুতাবাসঃ বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসসমূহে নিয়োগ প্রাপ্তির সুযোগ রয়েছে।
সন্তানদের অধ্যয়নঃ সন্তানদের যোগ্যতার ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস ইউনির্ভাসিটি, বিইউপি, আর্মড ফোর্সেস মেডিক্যাল কলেজ, এমআইএসটি, ক্যাডেট কলেজ ও বিমান বাহিনী পরিচালিত বিএএফ শাহীন স্কুল ও কলেজে অধ্যয়নের সুযোগ রয়েছে।
বাসস্থানঃ নিরাপদ ও মনোরম পরিবেশে মানসম্মত সুসজ্জিত বাসস্থানের সুযোগ রয়েছে।
যাতায়াতঃ বিমান বাহিনীর এক ঘাঁটি থেকে অন্য ঘাঁটিতে সপরিবারে বিমান বা হেলিকপ্টারযোগে যাতায়াতের সুযোগ রয়েছে।
চিকিৎসাঃ সামরিক হাসপাতালে নিজ, স্ত্রী ও সন্তাননের উন্নত চিকিৎসা, প্রয়োজনে নগদ অর্থ প্রদানসহ বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ থাকছে এবং সামরিক হাসপাতালে পিতা, মাতা, শশুর ও শাশুড়ির উন্নত চিকিৎসার সুযোগ রয়েছে।
(৪) পরীক্ষা পদ্ধতি(লিখিত পরীক্ষা):
- আইকিউ (IQ) -100 Marks
- ইংরেজি (English) – 50Marks
- সাধারণ জ্ঞান (general knowledge) =50 Marks
বাংলাদেশ বিমান বাহিনী সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্যঃ
১৯৭১ মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বিমান বাহিনীর সৈনিকেরা ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন এবং স্থল যুদ্ধের প্রস্তুতি ও পরিচালনায় সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালের জুলাইয়ে সেক্টর অধিনায়কদের সম্মেলনের সময় বিমান বাহিনী গঠন নিয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয় নি।
এসব কিছু মুলে উল্লেখযোগ্য কারণ হচ্ছে, সেই সময় তা সম্ভবপর এবং যুক্তি সংগত ছিলনা। ফলে প্রবাসী সরকার আনুষ্ঠানিক কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছায়নি। কিন্তু যুদ্ধের প্রথম থেকেই বেশ কিছু বিমান বাহিনীর কর্মকর্তা ও সদস্য সক্রিয় ভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। তাঁদের মধ্যে উইং কমান্ডার খাদেমুল বাশার ও স্কোয়াড্রন লিডার এম হামিদুল্লাহ্ খান যথাক্রমে ৬ ও ১১ নম্বর সেক্টরের অধিনায়ক ছিলেন।
এছাড়াও জেড ফোর্সে আশরাফ, রউফ, লিয়াকত প্রমুখও যুদ্ধ ময়দানে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্বরত অবস্থায় ছিলেন। অবশেষে ১৯৭১ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর ভারতের ডিমাপুরে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী গঠিত হয়। প্রথমদিকে বিমান বাহিনীর জনবল পাকিস্তান বিমান বাহিনীর পক্ষত্যাগী বাঙালি কর্মকর্তা ও বিমানসেনারা ছিলেন।
সে সময় ভারতে আশ্রয় নিয়ে যুদ্ধ সমাপ্ত পর্যন্ত থেকে যাওয়া বেশ কিছু বিমান কর্মকর্তা ছিলেন। যেমনঃ বদরুল আলম, সুলতান মাহমুদ, এ কে খন্দকার, সাবেক পিআইএ পাইলট ক্যাপ্টেন সাত্তার, পিআইএ পাইলট ক্যাপ্টেন সাহাবুদ্দিন আহমেদ, সাবেক পিআইএ পাইলট ক্যাপ্টেন সরফুদ্দিন এবং সাবেক কৃষিবিভাগের পাইলট ক্যাপ্টেন আকরাম আহমেদ প্রমুখ।
তাঁদের মধ্যে বিশেষ করে ২/৩ জনের দাবি অনুসারে, “বাংলাদেশ বিমান বাহিনী” নাম করণ করা হয় এবং তাঁদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। মূলত তাঁরাই ভারত থেকে তাঁরাই বাংলাদেশে উড়ে এসে বিভিন্ন দুঃসাহসিক অভিযান চালানো শুরু করেন এবং এই অপারেশনটিকে তাঁরাই কিলো ফ্লাইট নামকরণ করেন।
ভারত উপহার হিসেবে কিলো ফ্লাইটের সাফল্যর জন্য ছোট তিনটি পুরাতন বিমান দিয়েছিল। যেমনঃ একটি ডাকোটা ডিসি-৩ পরিবহন বিমান, একটি ডি.এইচ.সি-৩ টুইন অটার পর্যবেক্ষণ বিমান ও একটি ঔষধ নিক্ষেপের কাজে ব্যবহৃত অ্যালুয়েট থ্রি হেলিকপ্টার। ডিমাপুরের একটি পরিত্যক্ত রানওয়েতে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর কার্যক্রম শুরু করা হয়।
বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর টেকনিশিয়ানরা উপহার পাওয়া বিমানগুলো রূপান্তর ও আক্রমণ উপযোগী করে তোলার কাজ শুরু করেছিলেন। ডাকোটা বিমানটিকে ৫০০ পাউন্ড বোমা বহনের উপযোগী করে তোলা হয়েছিল এবং টুইন অটারটির প্রতি পাখার নিচে ৭টি করে রকেট যুক্ত করা হয়।
পাশাপাশি এটি ১০টি ২৫ পাউন্ড ওজনের বোমাও বহন করতে পারত যা একটি দরজা দিয়ে হাত দিয়ে নিক্ষেপ করা যেত। আর অ্যালুয়েট হেলিকপ্টারের সামনে একটি ৩০৩ ব্রাউনিং মেশিন গান এবং দুই পাইলন থেকে ১৪টি রকেট নিক্ষেপের ব্যবস্থা করা হতো এবং এই ছোট বাহিনীকে কিলো ফ্লাইট নামকরণ করা হয়।
স্কোয়াড্রন লিডার সুলতান মাহমুদকে কিলো ফ্লাইটের অধিনায়ক নির্বাচিত করা হয়েছিল। ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর বাংলাদেশ বিমান বাহিনী অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু করা হয়।
সেদিন ক্যাপ্টেন আকরাম কর্তৃক পরিচালিত আক্রমণে চট্টগ্রামের ইস্টার্ন রিফাইনারির তেল ডিপো ধ্বংস হয়ে যায়। ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর বিমান বাহিনী মৌলভীবাজারে অবস্থিত পাকিস্তানি বাহিনীর ব্যারাকে হামলা চালায়।
মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ বিমান বাহিনী পাকিস্তানিদের ঘাঁটিতে অনেকগুলো আক্রমণ পরিচালনা করে। ১৯৭২ সালের ৭ এপ্রিল থেকে সরকারি ঘোষণায় আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর কার্যক্রম শুরু হয়।