আপনার মূল্যবান ভোটটি দিন

বেসরকারি শিক্ষক অবসর কল্যাণ ভাতার নতুন খবর

বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারীদের ঘুরতে হচ্ছে দ্বারে দ্বারে। শেষ জীবনে এসে টাকা না পেয়ে অনেক শিক্ষক-কর্মচারীগণ অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটিয়ে চলেছেন। অনেকের চিকিৎসা হচ্ছে না এই টাকার অভাবে। অবসরে যাওয়ার পর টাকার অপেক্ষায় থেকে কেউ কেউ মারা গেছেন এমনও ঘটনা ঘটেছে।

বেসরকারি স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার যে সকল অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ও কর্মচারীগণ অবসর ভাতা ও কল্যাণ সুবিধার টাকা না পেয়ে বছরের পর বছর নিদারুণ সংকটে দিন কাটাচ্ছেন, তাঁদের ব্যথা আদৌ কেউ উপলব্ধি করতে পারে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। কেননা, তাঁদের কষ্ট উপলব্ধি করতে পারলে বাস্তবোচিত ও কার্যকর উদ্যোগ নিশ্চয়ই এত দিনে গৃহীত হতো । যে মানুষগুলো সারা জীবন মানুষ গড়ার কারিগর হিসেবে সেবা দিয়ে গেছেন, তাঁদেরই এখন জীবনের এই পর্যায়ে এসে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এটি জাতির জন্য লজ্জার।

শিক্ষক-কর্মচারীর অবসর ও কল্যাণ সুবিধার টাকা পেতে ত্রাহি অবস্থার মুখে পড়তে হচ্ছে। অথচ এই খাত থেকে তাঁরা যে অর্থ পান, তার বড় অংশই তাঁদের বেতন থেকে জমা রাখা হয়। এখন নিজেদের সেই অর্থ পেতে কমপক্ষে আড়াই বছর পর্যন্ত তাঁদের অপেক্ষা করতে হচ্ছে। দেড় বছরের আগে কল্যাণ সুবিধার টাকা পাওয়ার আশাই তাঁরা করতে পারছেন না। এই টাকা পাওয়ার জন্য বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষকগণ ও কর্মচারীদের অবসর সুবিধা পাওয়ার জন্য বোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্ট কার্যালয়ে তাঁদের নিত্যদিন ধন্যা দিতে হচ্ছে।

অবসর ও কল্যাণ সুবিধা বোর্ডের নিয়ম অনুযায়ী, এমপিওভুক্ত (বেতন বাবদ মাসে সরকারি অনুদান) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা অবসরের পর দুই ধরনের সুবিধা পান। একটি অবসর সুবিধা, আরেকটি কল্যাণ সুবিধা। পরিমাণে অবসর সুবিধার টাকা বেশি। নিয়মানুযায়ী বয়স ৬০ বছর অথবা চাকরির মেয়াদ ২৫ বছর পূর্ণ হলে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীরা অবসরে যান। তবে কেউ মারা গেলে তাঁর পরিবার নির্ধারিত পরিমাণে টাকা পায়। আবার অন্তত ১০ বছর পূর্ণ করে নিজ ইচ্ছায় অবসরে গেলে জমার টাকা সুদসহ পাওয়া যায়।

পূর্বে অবসর ও কল্যাণ সুবিধার জন্য মাসে আসল বেতনের যথাক্রমে ৪ ও ২ শতাংশ টাকা কেটে রাখা হতো। পরে তা বাড়িয়ে যথাক্রমে ৬ শতাংশ ও ৪ শতাংশ দেওয়া হতো। অবসর সুবিধার জন্য ৬ শতাংশ হারে টাকা কাটার পর বর্তমানে মাসে প্রায় ৬০ কোটি টাকা আদায় হয়। কিন্তু অবসর সুবিধা দিতে মাসে প্রয়োজন ৮০ কোটি টাকা। তার মানে বছরে ২৪০ কোটি টাকা ঘাটতি থাকছে। এখন আবেদনপত্র জমা দেওয়া সব শিক্ষক-কর্মচারীকে অবসর সুবিধার টাকা দিতে এককালীন আরও প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা দরকার।

অন্যদিকে জানা যাচ্ছে যে, কল্যাণ সুবিধা খাতে বর্তমান সময়ে প্রতি মাসে জমা হয় ৪০ কোটি টাকা। কিন্তু প্রতি মাসে প্রয়োজন হয় ৫০ কোটি টাকা। প্রতি বছরে ঘাটতি হচ্ছে ১২০ কোটি টাকা। আবেদন জমা থাকা মোট ১৫ হাজার ১০০ জনকে কল্যাণ সুবিধা দিতে এককালীন ৮৫০ কোটি টাকা দরকার হয়। বিভিন্ন অর্থবছরে এই খাতে সরকার ৩৬০ কোটি টাকা দিলেও তা যথেষ্ট হবে না।

সেই দিক বিবেচনা করলে অবসরপ্রাপ্ত এসব বেসরকারি শিক্ষকের এই তহবিলের জোগান দেওয়া কঠিন হওয়ার কথা নয়। তাই সরকার আবেদনকারী সব শিক্ষক-কর্মচারীর অবসর ভাতা দ্রুত মিটিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেবে, সেটাই প্রত্যাশিত।

সম্প্রীতি কিছুদিন আগেই, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ‘বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট’ এবং ‘বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ড’ নতুন করে গঠন করা হয়েছে ।

বুধবার(২৭ এপ্রিল) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আদেশে এই তথ্য পাওয়া গেছে । কল্যাণ ট্রাস্টের সচিব পদে নিযুক্ত রয়েছেন স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মো. শাহজাহান আলম সাজু এবং অবসর সুবিদা বোর্ডের সচিব পদে নিযুক্ত রয়েছেন শরীফ মোহাম্মদ সাদী। দুটি প্রতিষ্ঠানের সর্বশেষ বোর্ডেও তারা একই পদে নিযুক্ত ছিলেন। 

গত ৯ এপ্রিল এ দুটি কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে। এইজন্য অবসর ও কল্যাণ সুবিধার টাকার অপেক্ষায় থাকা ৩০ হাজারের বেশি প্রবীণ শিক্ষক-কর্মচারী পড়েছিলেন চরম বিপাকে । কল্যাণ ট্রাস্টের ফান্ডে প্রায় ২০০ কোটি টাকা জমা থাকা সত্বেও লোকবলের অভাবে আবেদনকারীদের টাকা দেওয়া যাচ্ছিল না ।

অন্যদিকে, কিছুদিন আগেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবসর ভাতার জন্য হাজার কোটি টাকা অন্যজনের সম্মতি দিল কমিটির না থাকায় এসব শিক্ষকের পাওনা অর্থ পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল। এখন সকল অনিশ্চয়তা কেটে গেল।

আরেকটি সূত্রে জানা যাচ্ছে যে কল্যাণ ট্রাস্ট সংস্থাটি বর্তমানে ২০২২ সালের মার্চের আবেদনকারীদের অর্থ পরিষদ করেছে সেখানে আবেদন অনিষ্পন্ন রয়েছে ১৯ হাজার ৪৬০ টি। এগুলো নিষ্পত্তি করতে ১৬০০ কোটি টাকা দরকার বলে জানান এ সংস্থার সচিব শাহজাহান আলম সাজু ।

অন্যদিকে অধ্যক্ষ শরিফ আহমেদ সাদী চলমান বছরের প্রথম দিকে জানিয়েছিলেন, মুজিববর্ষে বিশেষ কর্মসূচির আওতায় ১২০০০ শিক্ষককে আমরা অবসরের অর্থ পরিশোধ করতে চাই। এজন্য কিছুদিন আগে অবসর সুবিধা বোর্ডের পক্ষ থেকে ১০০০ কোটি টাকা চেয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে ।

Leave a Comment