ওজন কমাতে চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম
চিয়া সিড হলো এমন একটি উদ্ভিদের বীজ যা আমাদের শরীরের জন্য খুব উপকারী। চিয়া সীডের আলাদা বাংলা কোন নাম না থাকায় এটি চিয়া বীজ নামেই পরিচিত। অনেক পুষ্টিকর খাবারের মধ্যে চিয়া বীজ অন্যতম এবং এই বীজকে সুপার ফুড হিসেবেও বলা হয়ে থাকে। চিয়া বীজ হচ্ছে অনেক পুষ্টিকর উপাদানে ভরপুর।
এই চিয়া বীজ হলো কালো ও সাদা রঙের এবং এই চিয়া বীজ হলো আকারে অনেক ছোট হলেও এর গুনাগুন অনেক মান সম্পন্ন। এই চিয়া বীজ হচ্ছে সালভিয়া হিসপানিকা নামক মিন্টু প্রজাতির উদ্ভিদের বীজ এবং এর আদি জন্মস্থান হলো সেন্ট্রাল আমেরিকায়।
প্রাচীন আদিবাসী অ্যাজটেক জাতির খাদ্য তালিকায় এই চিয়া বীজ থাকার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল। এই চিয়া বীজকে প্রাচীন অধিবাসিরা শক্তি যোগানোর উৎস হিসেবে মনে করতো। চিয়া সাধারনত শস্যের মধ্যে পড়ে এবং এই চিয়া বীজ সবধরণের আবহাওয়াতে হতে পারে।
চিয়া বীজের পুষ্টি গুনাগুন গবেষনা করে দেখা গেছে দুধে যে পরিমাণ ক্যালসিয়াম থাকে তার থেকে ৫ গুণ বেশী ক্যালসিয়াম পাওয়া যায় চিয়া বীজে।
চিয়া সিড উৎপত্তিঃ চিয়া সিডের উৎপত্তি স্থান হলো দক্ষিণ আমেরিকাতে। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় এটি জন্মাচ্ছে। ৩ বছর ধরে গবেষণা করার পর গবেষকরা এই বীজের সফলতার দিক খুঁজে পেয়েছে।
বাংলাদেশের গবেষকগণ এই চিয়া বীজ দেশে আনেন এবং একে অভিযোজনের মাধ্যম হিসাবে উপযোগী করে তোলার চেষ্টা করে চলছেন। তারপর থেকে আস্তে আস্তে দেশের অনেক অঞ্চলে এই বীজের চাষাবাদ শুরু হতে থাকে।
কোথা থেকে সংগ্রহ করবেন এই চিয়া বীজঃ
বাংলাদেশের গবেষকরা এই বীজের আবির্ভাব ঘটায় বাংলাদেশের ভূমিতে। এই চিয়া বীজ বাংলাদেশের বড় বড় ভুসি, বীজ অথবা মুদির দোকানে পেতে পারেন এবং প্রতি ১০০ গ্রাম বীজ ৩০০-৪০০ টাকা দামে বিভিন্ন জায়গায় পাওয়া যায়। এই চিয়া সিড কোন কোন জায়গাতে কম দামেও পাওয়া যেতে পারে।
এই চিয়া বীজের গুনাবলী সম্পর্কে এখনও মানুষ অনেকাংশে না জানার কারণে এখনো বেশি করে মানুষের মাঝে এটি ব্যাপকভাবে আবির্ভূত হতে পারেনি। তাই অনেক স্থানে নাও পাওয়া যেতে পারে এই চিয়া বীজ।
চিয়া সিড খাওয়ার নিয়মঃ
স্থানভিত্তিক ভাবে এই চিয়া সিড খাবার বিভিন্ন দেশে আলাদা রকম হয়ে থাকে।
- সাধারন অর্থে এই চিয়া বীজ পানিতে মিশিয়ে খেতে পারেন।
- চিয়া বীজ রুটির সাথে সেবন করতে পারেন।
- ফলের রসের সাথে খেয়ে নিতে পারেন।
- ১ গ্লাস পানিতে ১ চা চামচ পরিমাণ ভালভাবে মিশিয়ে আধা ঘন্টা রেখে যদি খালি পেটে খাওয়া হয় তাহলে শরীরের জন্য খুব উপকারী কার্যকরিতা দেবে।
- চিয়া বীজ যদি লেবুর রসের সাথে মিশিয়ে খাওয়া হয় তাহলে ভাল ফলাফল পাওয়া যাবে এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে।
- সকালে খালি পেটে হালকা কুসুম গরম পানিতে ২০ মিনিট ভিজিয়ে রেখে তারপর খেয়ে নিন। ভালো কার্যকরিতা খেয়াল করতে পারবেন।
চিয়া সিড পুষ্টিগুণঃ এই চিয়া বীজে এতো পরিমাণ পুষ্টি রয়েছে যার জন্য এই বীজটি সুপার ফুড বা খাদ্য হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। কমলা লেবুতে যে পরিমাণ ভিটামিন-সি রয়েছে এই চিয়া বীজে তার থেকে ৭গুণ বেশি ভিটামিন-সি রয়েছে। এই চিয়া বীজে পালং শাকের চেয়ে বেশি পরিমাণে আত্মরণের মাত্রা রয়েছে। প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, প্রোটিন, ওমেগা-৩ ও ফেটিএসিড রয়েছে এই বীজে।
চিয়া সিড আরো অনেক পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান আছে। যেমনঃ এক আউন্স চিয়া বীজে রয়েছে,
- ২৮গ্রাম বা ১/৬ তম।
- ৯ গ্রাম চবি।
- ১১ গ্রাম ফাইবার।
চিয়া অনুরূপ বীজ যেমন শোষন হিসেবে পাওয়া যায় তেমনি এতে খনিজও রয়েছে এবং উচ্চ এ্যান্টি অক্সিডেন্ট সামগ্রিক স্তরের কারণে চিয়া বীজগুলি অতি তাড়াতাড়ি বিলুপ্ত হয় না।
চিয়া সিড কয়েকটি উপকারীতা নিম্নে উল্লেখ করা হলোঃ
- চিয়া বীজ শরীর থেকে বিষক্ত বা টক্রিল পদার্থ বের করে দিতে এই বীজের কার্যকরী ভূমিকা অনেক।
- চিয়া সিড মানুষের কর্ম ক্ষমতা ও শরীরে শক্তি বৃদ্ধি করে থাকে।
- এই বীজ ভাল ঘুমের জন্য ভালো কাজ করতে পারে।
- হজম শক্তি বাড়াতে সহায়তা করে।
- প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করতে পারে।
- ইমিউন সিস্টেম স্ট্রং করতে পারে।
- ব্লাড প্রেসার ও কোলেস্টরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে।
- ওজন কমাতে সহায়তা করে।
- চিয়া সিড গৃহপালিত পশু-পাখির খাদ্য হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
গবেষকদের ধারণামতে আরো জানা যায় যে, এই চিয়া বীজে ক্যালসিয়াম রয়েছে RDA (Recommended Dietary Allowance 18%), ফসফরাস- RDA এর 27% ।
এছাড়াও রয়েছে সুপরিচিত জিংক, ভিটামিন-বি (নায়াসিন পটাসিয়াম), ভিটামিন-বি-১, (থায়ামিন) ও ভিটামিন-বি-২, ১ মিলিগ্রাম জিংক, ১০৭ ক্যালোরী এনার্জি, ৮ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম ইত্যাদি।