আপনার মূল্যবান ভোটটি দিন

ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম

ইসবগুলের ভুষি পরিপাকতন্ত্রে যাবার পর নিজের সাথে পানি শোষণ করে ধরে রাখে এবং নিজে মানুষের শরীরে বের হয়ে আসে। পায়খানা নরম করে এবং পায়খানার পরিমান বাড়ায়। তবে শুষিত হয় না। ফলে নিজের সাথে পানি নিয়ে ফুলে পায়খানার সাথে বাইরে আসে।

ইসবগুলের ভুসি খাবার নিয়মঃ

(১) রাতে ও সকালে ২ মুঠ ইসবগুলের ভুষি পানিতে লেবুর শরবত অথবা দুধ অথবা ফলের রসের সাথে ভিজিয়ে সাথে সাথে খেয়ে নিবেন। তবে যদি একবেলা খান তাহলে সেটা সকাল বেলা খেতে হবে। দুইবেলা খেলে সকালে ও সন্ধ্যাবেলা খাবেন। একদম ঘুমাতে যাওয়ার আগে অথবা বিছানায় যাবার পূর্বে খাবেন না। খাবার পর যথেষ্ট পরিমানে পানি খেতে হবে।

কেন ভিজিয়ে রাখবেন না? 

অধিকাংশ ক্ষেত্রে ইসবগুলের ভূষি রাতে ভিজিয়ে রেখে দিনে খান অথবা দিনে ভিজিয়ে রেখে রাতে খান। এটা ঠিক নয়। ভেজানোর পর সাথে সাথে খাবেন। না হলে এটা বাহির থেকে পানি শোষণ করে নিবে এবং আপনি খাবার আগেই ফুলে যাবে। ফলে, আপনি এর কোনো উপকারিতা পাবেন না।

রাতে খাবেন না সকালে? 

আমরা প্রায় প্রায়ই এই ধরনের প্রশ্নের সম্মুখীন হই যে, ইসবগুলের ভুসি কখন খাব? রাতে না দিনে? খাবার খাওয়ার আগে না পরে খাব? তার আগে আমাদের জানতে হবে এটা কিভাবে কাজ করে থাকে। সাধারনত ইসবগুলের ভুষি খাওয়ার পর যথেষ্ট পরিমানে পানি খেতে হবে। 

আর রাতে ঘুমানোর আগে খেলে সারা রাত পানি খাওয়া হয় না। ফলে পায়খানা আরও শক্ত হওয়ার প্রবনতা থেকে যায়। তাই একবেলা খেলে সেটা দিনের বেলা সকালে খাওয়াই ভালো। সারাদিন কিছু না কিছু পানি খাওয়া হবে। জলে পায়খানা নরম থাকবে। আর রাতে খেলে সন্ধ্যা বেলায় খাবেন। তাহলে ঘুমাতে যাওয়ার আগে যথেষ্ট পরিমানে পানি খাওয়া হয়ে যাবে।

খালি পেটে খাবেন না ভরা পেটে? 

রোগীরা এই প্রশ্নসমুহ সবসময়ই জিজ্ঞাসা করে। এক্ষেত্রে উত্তরটা হলো, আপনার সুবিধামত খাবেন। খালি পেট বা ভরা পেট কোন বিষয় নয়।

শুধু কি পানির সাথে খাবো?

অনেকেই বলে খেতে ভালো লাগে না। খুবই কষ্টকর বা স্বাদ ভালো না। তবে এক্ষেত্রে আপনার সুবিধামত সুস্বাদু করে খেয়ে নিতে পারেন। তাই ইসবগুলের ভুষিটাকে আপনি পানির সাথে অথবা লেবুর শরবত অথবা দুধ অথবা হরলিক্স অথবা চিনি অথবা গুঁড় অথবা ফলের রসের সাথে ভিজিয়ে খেতে পারেন অর্থাৎ যেভাবে আপনার ভালো লাগে সেভাবেই আপনি খেয়ে নিতে পারেন।

অনেকের ধারনা ইসবগুলের ভুষি খেলে পাতলা পায়খানা হতে পারে। কিন্তু ইসবগুল একই সাথে ডায়রিয়া ও কোষ্ঠকাঠিন্য দুটিই প্রতিরোধ করতে সক্ষম হওয়ায় ইসবগুলের ভুষির সাথে পাতলা পায়খানার খুব একটা সম্পর্ক নাই।

ইসবগুলের ভুসি কখন খাওয়া যাবে না?

. ঘুমানোর ঠিক আগে ইসবগুলের ভুসি খাওয়া ঠিক নয়। এতে করে ঘুমের সময় বৃহদান্ত্রের (শরীরের যে অংশে মল তৈরি হয়) মুখ ভুসি জমে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় একে ‘অবস্ট্রাকশন’ বলা হয়।

‘অবস্ট্রাকশন’ একটি ইমারজেন্সি স্বাস্থ্য জটিলতা, এমনটা হলে জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে যেতে হয়। তাই, আপনার আগে কখনও এমনটা হয়ে থাকলে ইসবগুলের ভুসি খাবেন না।

. বৃহদান্ত্রের মাংসপেশির দুর্বলতা (Colonic Atony) বা ধীরগতি জনিত কোনো রোগ থাকলে ইসবগুলের ভুসি খাবেন না।

. মলত্যাগের ধরণ বা অভ্যাসে যদি হঠাৎ কোনো লক্ষণীয় পরিবর্তন আসে এবং তা দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে স্থায়ী হয় তাহলে ইসবগুলের ভুসি খাবেন না।

. আগে কখনও ইসবগুলের ভুসি খেয়ে শরীরে কোনো ধরনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয় তাহলে ইসবগুলের ভুসি খাবেন না।

. দীর্ঘদিন কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণে পায়খানা জমে পায়ুপথের মুখে আটকে যায় এমন হলে ইসবগুলের ভুসি খাবেন না।

. আগে থেকেই পায়ুপথ দিয়ে রক্ত যায়, যার কারণ এখনও পরিষ্কার নয় এমন হলে ইসবগুলের ভুসি খাবেন না।

. কোনো কারণে পেটেব্যথা, বমিবমি ভাব বা বমি হয় এমন হলে ইসবগুলের ভুসি খাবেন না।

ইসবগুলের কিছু উপকারিতাঃ

কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে: ইসবগুলের ভুসি কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে দারুণ কাজ করে। এতে রয়েছে অদ্রবণীয় ফাইবার যা কোষ্ঠকাঠিন্য রোগীদের মল নরম করে দেয়। ফলে খুব সহজেই ইলিমিনেশন সম্ভব হয়। তাই প্রতিদিন ঘুমানোর আগে ২ চামচ ইসবগুলের ভুসি ও ১ গ্লাস কুসুম গরম দুধ পান করে নিতে পারেন। কেউ যদি রোগটি পুষে রাখেন, তাহলে কোলন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

রক্তে কোলেস্টেরল কমায়: ইসবগুলের ভুসি খেলে আমাদের অন্ত্রে একধরনের স্তর তৈরি হয় যা কোলেস্টেরল শোষণে বাধা দান করে। তাই আমাদের রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। হৃদরোগীদের জন্য এটি অসম্ভব কার্যকরী একটি খাবার।

ডায়রিয়া প্রতিরোধ: অনেকেই ডায়রিয়ায় ভুগে থাকেন। তাদের জন্য দারুণ একটি রোগ নিরাময়কারী হচ্ছে ইসবগুলের ভুসি ও দই। এ দুটি একসাথে মিশিয়ে খেলে ডায়রিয়া থেকে মুক্তি পেয়ে যাবেন  সহজেই।

ওজন কমায়: ইসবগুলের ভুসিতে ফাইবার উপস্থিত থাকায় হজম প্রক্রিয়া অনেক ধীরগতিতে হয় এবং ক্ষুধা লাগে অনেক কম। এটি খেলে অনেক সহজেই ওজন কমানো যায়।

ডায়াবেটিস প্রতিরোধ: ইসবগুলের ভুসিতে রয়েছে জিলাটিন নামক একটি উপাদান যা দেহে গ্লুকোজের শোষণ ও ভাঙার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে। ফলে রক্তে সহজে সুগারের পরিমাণ বাড়তে পারে না এবং  ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে এ ভুসি খুবই কার্যকরী।

অ্যাসিডিটি কমায়: ভুসিতে উপস্থিত ফাইবার পাকস্থলীতে একটি স্তর তৈরি করে যা আমাদের অ্যাসিডিটির হাত থেকে রক্ষা করে। এছাড়া হজম প্রক্রিয়াকে গুরুত্তপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে এই ইসবগুলের ভুসি।

Leave a Comment