আপনার মূল্যবান ভোটটি দিন

অসমাপ্ত আত্মজীবনী সর্বশেষ কোন ভাষায় অনূদিত

অসমাপ্ত আত্মজীবনী শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মজীবনী সংকলন। ২০১২ সালের জুনে এ বইটি প্রকাশিত হয়। এ পর্যন্ত ক্রমান্বয়ে ইংরেজি, উর্দু, জাপানি, চিনা, আরবি, ফরাসি, হিন্দি, তুর্কি, নেপালি, স্পেনীয়, অসমীয়া, ইতালীয়,মালয়, কোরীয়, রুশ,মারাঠি ও সর্বশেষ গ্রীক ভাষায় বইটির অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী বইটি এখন গ্রিক ভাষায়ও পাওয়া যাচ্ছে। ৩১ অক্টোবর গ্রিসের রাজধানী এথেন্সের ত্রিয়ানন থিয়েটারে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের উদ্যোগে বইয়ের গ্রিক ভার্সনের মোড়ক আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মোচন হয়।

অনুষ্ঠানের যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ বলেন, বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী বইটি বাংলা ও বাঙালির ইতিহাসের স্মারক গ্রন্থ প্ৰকাশ পাবার পর এ পর্যন্ত ইংরেজি, উর্দু, জাপানি, মান্দারি (চীনা ভাষা), আরবি, ফরাসি, হিন্দি, তুর্কী, নেপালি, স্পেনিস, অসমীয়া, ইতালীয়, মালয়, কোরীয়, রুশ ও সর্বশেষ মারাঠি ভাষায় বইটির অনুবাদ প্রকাশ করা হয়েছে। 

তারই ধারাবাকিতায় এবার বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ, গ্রিস শাখার উদ্যোগে গ্রন্থটি গ্রিক ভাষায় রূপান্তর করে প্রকাশ করা হলো, যা সত্যিই আনন্দের। এমন মহৎ কর্মের সম্পৃক্ত সবাইকে জানাচ্ছি প্রাণঢালা অভিনন্দন।

এথেন্সের দিভানি কারাভেল হোটেলের বলরুমে মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। গ্রিক সংস্কৃতি ও ক্রীড়া বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সেক্রেটারি জেনারেল এলেনি দন্দুলাকি ও গ্রিসে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আসুদ আহমেদ।

সেই সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী বইটির গ্রিক ভাষায় অনুবাদকারী এথেন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক দিমিত্রিওস ভাসিলিয়াদিসও উপস্থিত ছিলেন।

রাষ্ট্রদূত আসুদ আহমেদ বলেছিলেন, বইটি গ্রিক ভাষায় অনুবাদের ফলে ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ঘটনাবহুল সময়ে পদ্মা-মেঘনা বিধৌত বাংলায় বাঙালির হাজার বছরের বঞ্চনার ইতিহাস ও বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাস ও ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের রাজনৈতিক উত্থান, বাঙালির স্বাধিকার আদায়ের আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে গুরুত্বপূর্ণ অংশ গ্রিক পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত করা হলো।

অসমাপ্ত আত্মজীবনী বইটি সংকলনের ইতিহাসঃ 

শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনের অনেক সময়ই জেলখানায় বন্দি অবস্থায় কেটেছে। ১৯৬৬-৬৯ সালে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রাজবন্দি ছিলেন তিনি। এ নিরিবিলি নিরানন্দ সময়গুলোতে বন্ধুবান্ধব, সহকর্মী এবং সহধর্মিণীর অনুপ্রেরণায় তিনি তার জীবনী লেখা শুরু করেন।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িটি পাক হানাদার বাহিনীর দখলে ছিল। 

এই বাড়িতেই একটি ড্রেসিংরুমের আলমারির উপরে অন্যান্য খাতাপত্রের সাথে শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা এই আত্মজীবনী, স্মৃতিকথা, ডায়েরি, ভ্রমণ কাহিনীও ছিল। পাকিস্তানি বাহিনী সমগ্র বাড়িটি লুটপাট ও ভাঙচুর করলেও এই কাগজপত্রগুলোকে মূল্যহীন ভেবে অক্ষত রেখে যায়।

পঁচাত্তরের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর বাড়িটি জিয়া সরকার কর্তৃক সিলগালা করে দেওয়া হয় এবং ১৯৮১ সালে বাড়িটি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়। সেই সময় ঐ বাড়িতে শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিকথা, ডায়েরি ও চীন ভ্রমণের খাতাগুলো খুঁজে পাওয়া গেলেও তাঁর আত্মজীবনীর পাণ্ডুলিপিটি খুঁজে পাওয়া যায় নি। শুধু কয়েকটি ছেঁড়া-উইপোকায় কাটা টাইপ করা ফুলস্কেপ কাগজ পাওয়া গিয়েছিল।

দীর্ঘদিন পর ২০০৪ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের এক ভাগ্নে অতি পুরানো-জীর্ণপ্রায় এবং প্রায়ই অস্পষ্ট লেখার চারটি খাতা শেখ হাসিনাকে এনে দেন। সে এই খাতা চারটি শেখ মুজিবের আরেক ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মণি’র অফিসের টেবিলের ড্রয়ার থেকে সংগ্রহ করেছিলেন। 

এই লেখাগুলোকে বঙ্গবন্ধু হারিয়ে যাওয়া পূর্বোক্ত আত্মজীবনী হিসেবে সুনিশ্চিত করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে শেখ মণিকে টাইপ করার জন্য এগুলো দেওয়া হয়েছিল। অতঃপর এগুলো বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খানের সম্পাদনায় গ্রন্থাকারে অসমাপ্ত আত্মজীবনী নামে ২০১২ সালের জুনে প্রকাশিত হয়। 

‘দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড’-এর পক্ষে এ গ্রন্থটি প্রকাশ করেন মহিউদ্দিন আহমেদ। বইটির প্রচ্ছদ এঁকেছেন শিল্পী সমর মজুমদার এবং কম্পিউটার গ্রাফিক্স ও স্ক্যান করেছেন ধনেশ্বর দাশ চম্পক। এতে মোট পৃষ্ঠা সংখ্যা ৩২৯।

আপনাদের জানিয়ে রাখি, ২০২১ সালে অসমাপ্ত আত্মজীবনী নিয়ে নির্মাণ করা হয় চলচ্চিত্র “চিরঞ্জীব মুজিব”। এটি ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর মুক্তি পেয়েছে এবং এতে রয়েছে ভাষা আন্দোলনের পটভূমিতে নির্মিত চলচিত্রটিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনের ১৯৪৯ থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত চিত্রিত হয়। 

এটির পরিচালক হচ্ছেন জুয়েল মাহমুদ। চলচ্চিত্রটিতে বঙ্গবন্ধুর চরিত্রে আহমেদ রুবেল অভিনয় করেছেন, বেগম ফজিলাতুন্নেছার চরিত্রে পূর্ণিমা অভিনয় করেছেন, বঙ্গবন্ধুর বাবার চরিত্রে খায়রুল আলম সবুজ অভিনয় করেছেন ও মায়ের চরিত্রে দিলারা জামান অভিনয় করেছেন।

আশা করি উপরোক্ত আলোচনা আপনাদের ভালো লেগেছে। পোস্টটি থেকে আপনি যদি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনাদের বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন এবং তাদেরকেও এই তথ্যগুলো থেকে উপকৃত হওয়ার সুযোগ করে দিন। শেষ পর্যন্ত থাকার জন্য ধন্যবাদ।

Leave a Comment