রেলওয়ে পয়েন্টসম্যান এর কাজ কি

ট্রেন চলাচল নির্বিঘ্ন করতে অতি জরুরি কর্মী হচ্ছেন পয়েন্টসম্যান বা পি-ম্যান। পয়েন্টসম্যান স্টেশন ছাড়ার আগে ট্রেনচালকের কাছে ট্র্যাক ও অন্যান্য বিষয়ে স্টেশনমাস্টারের নির্দেশনা পৌঁছে দিয়ে থাকেন।এছাড়াও, পয়েন্টসম্যান কোথাও কোথাও রেল ট্র্যাক পরিবর্তনের কাজটিও করে থাকেন।

একজন পয়েন্টসম্যানকে রেলওয়ের পয়েন্টসংক্রান্ত যাবতীয় কাজ করতে হয়। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া অথবা কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ায় যখন একটি ট্রেনের লোকোমাস্টার সিগন্যাল দেখতে ব্যর্থ হন অথবা সিগন্যালিং সিস্টেম কোনো কারণে ফেল করে, তখন সেই ট্রেনটিকে নিরাপদে নিয়ে আসার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ পয়েন্টসম্যানই করে থাকেন।

একটি ট্রেনের ইঞ্জিন কাটা থেকে শুরু করে ট্রেনটির মধ্যে বিভিন্ন কোচ যোজন-বিয়োজন করে সাজানোও তাঁর কাজের অংশবিশেষ। একটি মালবোঝাই গাড়ি দ্রুত ও দক্ষতার সঙ্গে সঠিক জায়গায় প্লেসমেন্ট দেওয়াও তাঁর দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। কাজের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার সুবাদে একজন পয়েন্টসম্যানের ‘চিফ ইয়ার্ড মাস্টার’ পর্যন্ত পদোন্নতি হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়।

রেলওয়ের পয়েন্ট সংক্রান্ত যাবতীয় কাজ করেন একজন পয়েন্টসম্যান। এরা হচ্ছেন ৪র্থ শ্রেণির সরকারি কর্মচারী। সাধারণত পয়েন্টসম্যানরা বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তার অধীনে কাজ করে থাকেন। তবে মাঠ পর্যায়ে একজন ষ্টেশন মাস্টার অথবা একজন ইয়ার্ড মাস্টারের অধীনে দায়িত্ব পালন করে থাকেন।

ট্রেন চলাচল নির্বিঘ্ন করতে বিশেষ ভাবে জরুরি কাজে নিয়োজিত থাকে পয়েন্টসম্যান পদের কর্মচারীগণ। পয়েন্টসম্যানরা স্টেশন ছাড়ার আগে ট্রেনচালকের কাছে ট্র্যাক ও অন্যান্য বিষয়ে স্টেশনমাস্টারের নির্দেশনা পৌঁছে দেন। তারা কোথাও কোথাও রেল ট্র্যাক পরিবর্তনের কাজটিও করে থাকেন।

points-man বা pointsman পদের কর্মচারীরা পিম্যান (p-man) নামেও খ্যাত। এই পদে লোকবল সংকট থাকলেও তা কাটিয়ে উঠতে পারছে না রেলওয়ে। এতে করে বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে অন্তত ২০টি গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনে রেলওয়ের যাত্রী ও পরিবহন সেবা।

পয়েন্টগুলো কোথায় থাকে?

কোনো রেল স্টেশনে ১টি লুপ লাইন থাকলে এর উভয় পাশে ৪টি পয়েন্ট থাকবে। এসব পায়েন্টের অবস্থান হচ্ছে প্রতিটি স্টেশনের হোম থেকে এডভান্স স্টার্টারের আগ পর্যন্ত। যে স্টেশনে যত লুপ লাইন তার চারগুন পয়েন্ট থাকতে পারে, আবার এ ক্ষেত্রে কমবেশিও হতে পারে। 

বিষয়টি নির্ভর করে ১টি স্টেশনের ট্রাফিক এবং কার্যক্রমের গুরুত্ব অনুসারে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া অথবা কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ায় যখন একটা ট্রেনের লোকোমাস্টার সিগন্যাল দেখতে ব্যর্থ হন অথবা সিগনালিং সিস্টেম কোনো কারনে ফেল করে থাকে, তখন পয়েন্টসম্যানদের সেই ট্রেনটিকে নিরাপদে নিয়ে আসার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো করতে হয়। 

একটি ট্রেনের ইঞ্জিন কাটা থেকে শুরু করে ট্রেনটির মধ্যে বিভিন্ন কোচ যোজন-বিয়োজন করে সাজানোও পয়েন্টসম্যানের কাজের অংশবিশেষ। এছাড়া মাল বোঝাই গাড়ি দ্রুত ও দক্ষতার সাথে সঠিক জায়গায় প্লেসমেন্ট দেওয়াও তার দায়িত্ব।

পয়েন্টসম্যানের বেতনঃ

পয়েন্টসম্যানের পদের জন্য বেতন ধরা হয় ১৮তম গ্রেডে (৮,৮০০-২১,৩১০ টাকা)।

পয়েন্টসম্যান পদোন্নতিঃ

একজন পয়েন্টসম্যান কাজের দক্ষতা, সিনসিয়ারিটি অনুযায়ী চীফ ইয়ার্ড মাস্টার পর্যন্ত যাওয়ার সুযোগ থাকে। এছাড়াও ইয়ার্ড ফোরম্যান পদে ৬ বছর চাকুরীকাল অতিক্রম হওয়ার পর ট্রেন পরিচালক বা গার্ড পদে যাওয়ার সুযোগ থাকে।

সম্প্রীতি কিছুদিন আগে পাওয়া খবরঃ

পি-ম্যান নামে পরিচিত গুরুত্বপূর্ণ এ পদে লোকবল সংকট থাকলেও রেলওয়ে তা কাটিয়ে উঠতে পারছে না। এতে করে অন্তত ২০টি গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনে রেলওয়ের যাত্রী ও পরিবহন সেবা বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। পয়েন্টসম্যান সংকট কাটাতে নিয়োগবিধি সংশোধনে রেলপথ মন্ত্রণালয় কালক্ষেপণ করছে বলেও অভিযোগ সোনা যাচ্ছে।

জানা গেছে, পয়েন্টসম্যানের পদটি হচ্ছে চতুর্থ শ্রেণীর। রেলওয়ের এই পদে সরাসরি নিয়োগের সুযোগ নেই। বিদ্যমান নিয়োগবিধি অনুসারে, রেলওয়ের ট্রাফিক বিভাগে গেটকিপার, পোর্টার, সিলম্যান ও ওয়েটিংরুম বেয়ারাসহ অন্যান্য চতুর্থ শ্রেণীর পদের জন্য ন্যূনতম তিন বছর কর্মরতদের মধ্য থেকে পয়েন্টসম্যান নিয়োগ দিতে হয়। কিন্তু মামলাজনিত কারণে প্রায় এক দশক ধরে ট্রাফিক বিভাগে চতুর্থ শ্রেণীর লোকবল নিয়োগে ধীরগতির পাশাপাশি একাধিক পদের নিয়োগ প্রক্রিয়া আটকে আছে। এ কারণে পয়েন্টসম্যান পদেও পদোন্নতিযোগ্য কর্মী পাওয়া যাচ্ছে না।

সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রায় তিন বছর আগে নিয়োগবিধি সংশোধন করে রেলের বিভিন্ন বিভাগ থেকে পয়েন্টসম্যান নিয়োগের উদ্যোগ নেয়া হয়। তবে এখনো রেলের পরিবহন বিভাগের এ উদ্যোগটি মন্ত্রণালয়ে আটকে আছে। এদিকে পয়েন্টসম্যান পদে কর্মী সংকটের কারণে আগামী সময়ের মধ্যে শুধু পূর্বাঞ্চলেই রেলের ২০টি স্টেশন বন্ধ হয়ে যেতে পারে। একই কারণে নিরাপদ ট্রেন পরিচালনা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কাও তৈরি হচ্ছে।

রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, নিয়োগবিধি সংশোধনের মাধ্যমে পয়েন্টসম্যান নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে ২০১৭ সালের জুলাইয়ে একটি চিঠি পাঠান রেলওয়ের মহাপরিচালক আমজাদ হোসেন (তত্কালীন)। 

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিবকে দেয়া ওই চিঠিতে ফিডার পদ থেকে চাহিদা অনুযায়ী পয়েন্টসম্যান না পাওয়ায় রেলওয়ের নিয়োগবিধি-১৯৮৫ সংশোধনের অনুরোধ জানানো হয়েছিল। এর মাধ্যমে পয়েন্টসম্যানের ৬০ শতাংশ শূন্যপদে সরাসরি নিয়োগ এবং ৪০ শতাংশ পদ রেলের যেকোনো বিভাগের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মীদের পদোন্নতি দিয়ে পূরণের জন্য অনুরোধ জানানো হয়।

এক্ষেত্রে সরাসরি নিয়োগের জন্য এসএসসি বা সমমান ও ফিডার পদ থেকে পদোন্নতি ও তিন বছরের চাকরির যোগ্যতা রাখতে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তবে চিঠি প্রাপ্তির পর এখনো কোনো উদ্যোগ নেয়নি রেলপথ মন্ত্রণালয়। তবে জানা গেছে , খুব তাড়াতাড়ি সম্ভব মন্ত্রণালয় থেকে পয়েন্টসম্যানের নিয়োগ প্রকাশ করবে।

Leave a Comment